সোরিয়াসিসের চিকিৎসা এখন সম্ভব ঘরোয়া উপায়ে। জেনে নিন কীভাবে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে এই চর্মরোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
সোরিয়াসিস কী?
সোরিয়াসিস একটি দীর্ঘমেয়াদি চর্মরোগ যা শরীরের ত্বকে লালচে, শুষ্ক ও খোসপাঁচড়াযুক্ত দাগ সৃষ্টি করে। এটি একটি অটোইমিউন ডিজঅর্ডার, অর্থাৎ শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুলবশত নিজের ত্বককেই আক্রমণ করে।
কেন হয় সোরিয়াসিস?
সোরিয়াসিস তখনই হয় যখন শরীরের ইমিউন সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা) ত্বক কোষকে খুব দ্রুত তৈরি করতে শুরু করে। স্বাভাবিকভাবে ত্বকের কোষ পরিবর্তন হতে ৩-৪ সপ্তাহ লাগে, কিন্তু সোরিয়াসিসে এই প্রক্রিয়া মাত্র ৩-৭ দিনেই ঘটে যায়। ফলে পুরোনো কোষ নতুন কোষের নিচে চাপা পড়ে খোসপাঁচড়া তৈরি হয়।
সাধারণত যেসব জায়গায় হয়
- কনুই ও হাঁটু
- মাথার ত্বক (স্ক্যাল্প)
- পিঠ ও পেট
- নখ
- কখনো কখনো শরীরের যে কোনো অংশেই হতে পারে
সোরিয়াসিসের চিকিৎসা বাড়িতে
কারা বেশি আক্রান্ত হন?
- যাদের পরিবারে এই রোগের ইতিহাস আছে
- মানসিক চাপ বা স্ট্রেসে ভোগেন
- ধূমপান বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন করেন
- সংক্রমণ বা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও হতে পারে
হোমিওপ্যাথি কীভাবে কাজ করে সোরিয়াসিসে?
হোমিওপ্যাথি একটি প্রাকৃতিক ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি রোগীর শারীরিক, মানসিক এবং আবেগগত উপসর্গ বিবেচনা করে নির্ধারিত হয়। সোরিয়াসিসের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা মূলত দেহের ইমিউন সিস্টেমকে ভারসাম্যপূর্ণ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
সোরিয়াসিসের চিকিৎসা বাড়িতে
জনপ্রিয় হোমিওপ্যাথিক ওষুধসমূহ (শুধুমাত্র অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণযোগ্য)
1. Arsenicum Album
ত্বকের জ্বালাভাব, চুলকানি এবং রাত্রে উপসর্গ বেড়ে গেলে এটি উপকারী হতে পারে।
2. Graphites
ত্বকে ফাটল, রুক্ষতা ও নির্গত তরলের জন্য কার্যকর।
3. Sulphur
প্রচণ্ড চুলকানি ও পুড়ার অনুভূতি থাকলে এটি ব্যবহৃত হয়।
4. Mezereum
খোসপাঁচড়া জাতীয় উপসর্গ ও ঘন খুশকিযুক্ত ত্বকে কার্যকর।
5. Lycopodium
যাদের হজমের সমস্যা বা মানসিক চাপ থেকে সোরিয়াসিস দেখা দেয়, তাদের জন্য উপযোগী।
হোমিওপ্যাথির সুবিধাসমূহ
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রায় নেই
- দীর্ঘমেয়াদী সমাধান
- পুরো দেহকে বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসা
- মানসিক সুস্থতাও সমান গুরুত্ব পায়
সতর্কতা
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিজে থেকে শুরু করা উচিত নয়। একজন অভিজ্ঞ রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
ওজন কমানোর জন্য রাতের খাবার পরিকল্পনা ২০২৫
পিরিয়ডের জন্য সেরা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ২০২৫
গর্ভবতী মেয়েদের খাবার: সহজ ও স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি
PCOD হলে কী কী খাওয়া যাবে না?
ঘুমের জন্য সার্কাডিয়ান রিদম ঠিক রাখা
গর্ভবতী অবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা ও ক্ষতি | গর্ভকালীন পুষ্টি গাইড
সোরিয়াসিসের লক্ষণসমূহ
- ত্বকে রুক্ষ, মোটা খোসযুক্ত লালচে দাগ
- চুলকানি ও জ্বালাপোড়া
- চুল, হাঁটু, কনুই ও পিঠে বেশি দেখা যায়
- কখনো কখনো নখেও প্রভাব পড়ে
সোরিয়াসিসের চিকিৎসা বাড়িতে
সোরিয়াসিসের চিকিৎসা বাড়িতে: কার্যকরী ঘরোয়া উপায়
১. 🌴 নারকেল তেল ম্যাসাজ
সোরিয়াসিসে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে পড়ে। নারকেল তেল একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার যা ত্বককে নরম রাখে এবং খোসপাঁচড়া কমাতে সাহায্য করে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন:
প্রতিদিন রাতে আক্রান্ত স্থানে হালকা গরম নারকেল তেল ম্যাসাজ করুন।
সুবিধা: খোসপাঁচড়া ও চুলকানি দূর করে।
২. 🌿 অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরা ত্বকের প্রদাহ কমায় ও হাইড্রেট রাখে। এটি ত্বকে ঠাণ্ডা অনুভূতি এনে আরাম দেয়।
কীভাবে ব্যবহার করবেন:
গাছ থেকে তাজা জেল সংগ্রহ করে দিনে ২-৩ বার আক্রান্ত স্থানে লাগান।
সুবিধা: জ্বালাপোড়া কমায় ও ত্বকের রুক্ষতা দূর করে।
৩. 🛁 ওটমিল বাথ
ওটমিলে থাকে স্যাভলিয়েন্ট উপাদান যা ত্বকের চুলকানি ও জ্বালা কমাতে সাহায্য করে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন:
১ কাপ পিষে নেওয়া ওটমিল হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে ১৫-২০ মিনিট গোসল করুন।
সুবিধা: ত্বককে আরাম দেয় ও মসৃণ করে।
৪. 🍎 আপেল সিডার ভিনেগার
এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক। মাথার ত্বকে (স্ক্যাল্প) সোরিয়াসিসে এটি বেশ কার্যকর।
কীভাবে ব্যবহার করবেন:
১ অংশ আপেল ভিনেগার ও ১ অংশ পানি মিশিয়ে তুলো দিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান।
সতর্কতা: কাটা বা ফাটা চামড়ায় ব্যবহার করবেন না।
৫. 🧘♀️ মানসিক চাপ কমানো
স্ট্রেস সোরিয়াসিসের বড় কারণ। তাই মানসিক প্রশান্তি খুবই জরুরি।
যা করতে পারেন:
- মেডিটেশন
- নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম
- পর্যাপ্ত ঘুম
৬. 🥦 সঠিক খাদ্যাভ্যাস
খাবারেও সোরিয়াসিস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কিছু খাবার উপকারী, আবার কিছু খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।
খেতে পারেন:
- ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ (সালমন, টুনা)
- শাকসবজি ও ফল
- হলুদ (anti-inflammatory)
- প্রচুর পানি
সোরিয়াসিসের চিকিৎসা বাড়িতে
❌ এড়িয়ে চলুন:
- ভাজা-পোড়া খাবার
- চিনি ও অতিরিক্ত লবণ
- অ্যালকোহল
- দুগ্ধজাত খাবার (কিছু ক্ষেত্রে ট্রিগার হতে পারে)
৭. ☀️ সূর্যালোক গ্রহণ
প্রাকৃতিক সূর্যের আলোতে থাকা UVB রশ্মি সোরিয়াসিস কমাতে সাহায্য করে।
কীভাবে করবেন:
প্রতিদিন সকালবেলা ১০-১৫ মিনিট সূর্যস্নান করুন, তবে অতিরিক্ত রোদ এড়িয়ে চলুন।
সুবিধা: নতুন কোষ গঠনের হার কমে যায়।
সোরিয়াসিসের চিকিৎসা বাড়িতে
সোরিয়াসিস রোগীর খাবার তালিকা – কী খাবেন আর কী এড়িয়ে চলবেন?

সোরিয়াসিস (Psoriasis) একটি দীর্ঘমেয়াদী ত্বকের রোগ যা ইমিউন সিস্টেমের সমস্যার কারণে হয়। এই রোগে ত্বকে লালচে, খুসকিময় প্যাচ তৈরি হয় যা অনেক সময় ব্যথা ও চুলকানির কারণ হয়। যদিও সোরিয়াসিসের কোনও স্থায়ী চিকিৎসা নেই, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করতে পারে।
এই আর্টিকেলে আপনি জানবেন সোরিয়াসিস রোগীর জন্য উপযুক্ত খাবারের তালিকা এবং কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
সোরিয়াসিস রোগীর জন্য উপযুক্ত খাবার
নিচের খাবারগুলো প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং ইমিউন সিস্টেমকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে:
✅ ১. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার
- সামুদ্রিক মাছ (স্যালমন, ম্যাকারেল, সার্ডিন)
- চিয়া সিড
- ফ্ল্যাক্স সিড (তিসি বীজ)
- আখরোট
➡️ এই খাবারগুলো প্রদাহ কমাতে সহায়ক এবং ত্বকের কোষের সুস্থতায় সহায়তা করে।
✅ ২. রঙিন সবজি ও ফলমূল
- গাজর, পালং শাক, ব্রকলি
- বেরি (স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি)
- আমলকি, পেঁপে, কলা
➡️ এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন C সমৃদ্ধ এই খাবারগুলো ত্বককে রক্ষা করে।
সোরিয়াসিসের চিকিৎসা বাড়িতে
✅ ৩. সম্পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার
- ব্রাউন রাইস
- ওটস
- কোয়িনোয়া
➡️ ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় হজম ভালো হয় ও দেহে টক্সিন জমা কমে।
✅ ৪. প্রোবায়োটিক খাবার
- টক দই
- কেফির
- ফার্মেন্টেড সবজি (যেমন: আচার)
➡️ অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, যা ইমিউন সিস্টেমে প্রভাব ফেলে।
সোরিয়াসিসের চিকিৎসা বাড়িতে
✅ ৫. জলপান বেশি করুন
- প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি
- তাজা ডাবের পানি
➡️ শরীর হাইড্রেটেড থাকলে ত্বকও থাকবে সজীব।
সোরিয়াসিস রোগীর এড়িয়ে চলা উচিত এমন খাবার
সোরিয়াসিসের চিকিৎসা বাড়িতে
❌ ১. প্রসেসড ও ফাস্ট ফুড
- প্যাকেটজাত খাবার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিপস
➡️ ট্রান্স ফ্যাট ও প্রিজারভেটিভ প্রদাহ বাড়াতে পারে।
❌ ২. দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
- গরুর দুধ, চিজ, মাখন
➡️ কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এগুলো সোরিয়াসিসের উপসর্গ বাড়িয়ে দিতে পারে।
❌ ৩. চিনি ও মিষ্টি
- সফট ড্রিঙ্ক, ক্যান্ডি, মিষ্টান্ন
➡️ শরীরে ইনসুলিন বাড়িয়ে প্রদাহের ঝুঁকি বাড়ায়।
❌ ৪. গ্লুটেনযুক্ত খাবার
- সাদা রুটি, পাস্তা
➡️ গ্লুটেন সংবেদনশীলতার কারণে অনেক সোরিয়াসিস রোগীর সমস্যা বেড়ে যায়।
❌ ৫. অ্যালকোহল ও ধূমপান
➡️ এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায় ও প্রদাহ বাড়ায়।
সোরিয়াসিসের চিকিৎসা বাড়িতে
কী করবেন না?
- ত্বক ঘষবেন না
- অতিরিক্ত গরম পানিতে গোসল করবেন না
- স্ট্রেস বা মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন
- ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন করুন
কবে ডাক্তার দেখানো জরুরি?
যদি ঘরোয়া চিকিৎসাতেও উপশম না হয় বা দাগগুলো ক্রমশ বাড়ে, তবে অবশ্যই চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
উপসংহার
সোরিয়াসিস একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হলেও নিয়মিত যত্ন ও সঠিক লাইফস্টাইল মেনে চললে তা সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ঘরোয়া উপাদান ও প্রাকৃতিক চিকিৎসায় অনেকটাই আরাম পাওয়া সম্ভব।
👉 আপনি কি সোরিয়াসিসে ভুগছেন? নিচে কমেন্টে আপনার অভিজ্ঞতা জানান এবং পোস্টটি শেয়ার করুন যেন আরও অনেকেই উপকার পান!
সোরিয়াসিস কী?
সোরিয়াসিস একটি দীর্ঘমেয়াদী চর্মরোগ, যেখানে ত্বক কোষগুলো অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পায়, ফলে ত্বকে লালচে দাগ, খোসপাঁচড়া ও চুলকানি দেখা দেয়। এটি সংক্রামক নয়, তবে জেনেটিক ও পরিবেশগত কারণে হতে পারে।
সোরিয়াসিস কি সম্পূর্ণভাবে ভালো হয়?
সোরিয়াসিস এখনো সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়, তবে সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারা মেনে চললে এটি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
সোরিয়াসিসের জন্য কোন ঘরোয়া চিকিৎসা সবচেয়ে কার্যকর?
নারকেল তেল, অ্যালোভেরা জেল, ওটমিল বাথ, আপেল সিডার ভিনেগার এবং সূর্যালোক গ্রহণ ঘরোয়া চিকিৎসার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্যকর বলে ধরা হয়।
সোরিয়াসিস কি ছোঁয়াচে রোগ?
না, সোরিয়াসিস ছোঁয়াচে নয়। এটি কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয় না, তাই একজন থেকে অন্যজনে ছড়ায় না






1 thought on “সোরিয়াসিসের চিকিৎসা বাড়িতে: প্রাকৃতিক উপায়ে মুক্তির সহজ পদ্ধতি”