নারীদের পিরিয়ড বা মাসিক চলাকালীন সময়ে শরীরের কিছু পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে সঠিক যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলি পালন করলে শরীর এবং মন দুটোই ভাল থাকবে। নিচে কিছু সেরা স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের কথা বলা হলো
১. নিয়মিত পানি পান করুন
পানি শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে পিরিয়ড চলাকালীন। এই সময় শরীরের অনেক পরিবর্তন ঘটে এবং অতিরিক্ত পানি খাওয়া আপনাকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। পানির অনেক উপকারিতা রয়েছে, যেমন:
- দেহে অতিরিক্ত টক্সিন বের করতে সাহায্য:
পানি খাওয়া শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে এবং দেহকে পরিষ্কার রাখে। এটি বিশেষভাবে পিরিয়ডের সময় শরীরের বিষাক্ত পদার্থ মুক্ত করতে সাহায্য করে। - কনস্টিপেশন কমাতে সাহায্য:
পিরিয়ডের সময় অনেকেই কনস্টিপেশন বা অজীর্ণতার সমস্যায় ভোগেন। পানি পান করলে পেটের গতি ঠিক থাকে এবং হজম প্রক্রিয়া ভালো হয়। - ব্যথা এবং অস্বস্তি কমাতে সহায়ক:
পিরিয়ডের সময় পেটের নিচে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূতি হলে পানি পান করলে এটি কিছুটা উপশম দিতে পারে। বিশেষ করে গরম পানি পান করলে উপকার পাওয়া যায়। - মুখ এবং ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য:
পিরিয়ডের সময় শরীর কিছুটা ডিহাইড্রেটেড হতে পারে, যা ত্বকের স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করতে পারে। নিয়মিত পানি পান করলে ত্বক আর্দ্র এবং সজীব থাকে। - হরমোনাল ভারসাম্য বজায় রাখে:
পানি খাওয়া শরীরের হরমোনাল ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা মাসিক চলাকালীন হরমোনের পরিবর্তনগুলো মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে।
এ কারণে পিরিয়ড চলাকালীন দিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
পিরিয়ডের জন্য সেরা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ২০২৫
২. সুষম খাদ্যগ্রহণ করুন
পিরিয়ডের সময় সুষম খাদ্যগ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই সময় শরীরের বিশেষ কিছু প্রয়োজনীয়তা থাকে যা সঠিক পুষ্টি দ্বারা পূর্ণ করা যায়। সুষম খাদ্য মানে এমন খাবার খাওয়া যা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে পরিপূর্ণ, যেমন প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট। পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে সুষম খাদ্য আপনার শরীরকে শক্তি দিতে সহায়ক এবং মাসিক সমস্যা যেমন ব্যথা বা ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
নিচে সুষম খাদ্যগ্রহণের কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো:
- আয়রনসমৃদ্ধ খাবার:
পিরিয়ডের সময় রক্তস্রাবের কারণে শরীরে আয়রনের ঘাটতি হতে পারে। তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজি (স্পিনাচ, পালং শাক), লাল মাংস, মুরগির মাংস, মটরশুঁটি এবং দই খাওয়া উচিত। আয়রন শরীরের শক্তির মাত্রা বাড়াতে এবং ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে। - ভিটামিন বি6:
ভিটামিন বি6 পিরিয়ডের সময় মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, কারণ এটি হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং মুড সুইং কমাতে সহায়ক। পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে ভিটামিন বি6 এর উৎস যেমন কলা, আলু, মিষ্টি আলু, শাকসবজি ও বাদাম খাওয়া উচিত। - ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড:
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ (স্যালমন, টুনা), চিয়া সিড, আখরোট এবং ফ্ল্যাক্সসিড পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপকারিতা প্রদান করে। - ক্যালসিয়াম:
পিরিয়ডের সময় ক্যালসিয়াম শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি পেশি সঙ্কোচন এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। দুধ, দই, পনির, সয়া এবং সবুজ শাকসবজি (যেমন ব্রকলি ও পালং শাক) ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। - ফলমূল এবং শাকসবজি:
পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল এবং শাকসবজি খাওয়া জরুরি। এগুলি ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবারে ভরপুর, যা হজমে সাহায্য করে এবং শরীরের সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখে। বিশেষ করে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন কমলা, কিউই, স্ট্রবেরি খাওয়া ভালো। - প্রোটিন:
প্রোটিন পেশি এবং টিস্যু মেরামতে সাহায্য করে এবং শক্তির উৎস হিসাবে কাজ করে। মাছ, মাংস, ডাল, ছোলা, বাদাম, এবং টোফু প্রোটিনের ভালো উৎস। প্রোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে এবং খাওয়ার পর ক্লান্তি কমায়। - ম্যাগনেসিয়াম:
ম্যাগনেসিয়াম পিরিয়ডের সময় মাংসপেশির সঙ্কোচন কমাতে এবং পেটের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। এর ভালো উৎস হচ্ছে বাদাম, সয়া, শাকসবজি এবং মিষ্টি আলু। - কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট:
পিরিয়ডের সময় শরীরে অতিরিক্ত শর্করা বা গ্লুকোজের চাহিদা বাড়ে, তবে সাদা রুটি বা মিষ্টি খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। এর পরিবর্তে সুষম পরিমাণে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট যেমন বাদামি চাল, ওটস, এবং শস্য খাওয়া উচিত। এগুলি ধীরে ধীরে শক্তি প্রদান করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে।
এছাড়াও, মিষ্টি বা তৈলাক্ত খাবার কম খাওয়া এবং কাঁচা বা অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার পরিহার করা উচিত। এসব খাবার পিরিয়ডের সময় আপনার শরীরকে অতিরিক্ত চাপের মধ্যে ফেলতে পারে।
পিরিয়ডের জন্য সেরা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ২০২৫
৩. ব্যায়াম করুন
পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে শরীরের কিছু পরিবর্তন হয় এবং অনেকেই এই সময়ে ক্লান্তি, ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করেন। তবে, পিরিয়ডের সময়ও কিছু হালকা বা মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করা অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। ব্যায়াম শরীরকে শক্তিশালী রাখে, মুড উন্নত করে এবং পিরিয়ডের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু সমস্যাকে কমাতে সাহায্য করতে পারে।
এখানে পিরিয়ডের সময়ে উপকারী কিছু ব্যায়ামের কথা বলা হলো:
- হালকা হাঁটা (Walking):
পিরিয়ডের সময় হাঁটা একটি সহজ এবং নিরাপদ ব্যায়াম। এটি আপনার শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং শারীরিক অস্বস্তি দূর করতে সহায়ক হতে পারে। ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা হাঁটা শরীরের জন্য ভালো, তবে পিরিয়ডের ব্যথা বেশি হলে হালকা হাঁটা করুন। - যোগব্যায়াম (Yoga):
যোগব্যায়াম পিরিয়ড চলাকালীন সময়ের জন্য খুবই উপকারী। এটি শরীরকে নমনীয় করে, মাংসপেশির ক্লান্তি কমায় এবং মানসিক চাপও কমাতে সাহায্য করে। বিশেষভাবে যোগের কিছু আসন যেমন ক্যাট কাউ পোজ (Cat-Cow Pose), চাইল্ড পোজ (Child Pose), এবং কবজ পোজ (Cobra Pose) পিরিয়ডের ব্যথা উপশমে সাহায্য করতে পারে। - পিলেটস (Pilates):
পিলেটস শরীরের শক্তি বাড়ায় এবং ফোকাস করে শরীরের কেন্দ্রস্থলে (কোর)। এটি পিরিয়ডের সময় পেটের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরকে আরামদায়কভাবে নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। পিলেটসে ফোকাস করা হয় শ্বাস-প্রশ্বাস এবং শরীরের মানসিক অবস্থাও উন্নত হয়। - হালকা স্ট্রেচিং (Light Stretching):
পিরিয়ডের সময় শরীর বেশ কঠিন এবং সংকোচন হতে পারে। তাই হালকা স্ট্রেচিং করতে পারেন। এটি পেশি শিথিল করে এবং রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। পিঠ, পেট এবং পায়ের স্ট্রেচিং বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে। - সুইমিং (Swimming):
যদি আপনি সুইমিং পছন্দ করেন, তবে এটি একটি আদর্শ ব্যায়াম। সুইমিংয়ে পুরো শরীর কাজ করে, এবং এটি পিরিয়ডের সময় শারীরিক অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, সাঁতার কাটার সময় অবশ্যই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, যেমন হাইজিন বজায় রাখা। - বাইসাইক্লিং (Cycling):
বাইসাইক্লিং একটি চমৎকার ব্যায়াম, বিশেষ করে বাইক চালানো হলে পেটের ব্যথা উপশম হতে পারে এবং এটি পেশির শক্তি বাড়ায়। তবে, সাইকেল চালানোর সময় খুব বেশি চাপ দেওয়া বা তীব্র গতি না রাখাই ভালো।
ব্যায়াম করার সময় কিছু সতর্কতা:
- ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব হলে: পিরিয়ডের সময় যদি বেশি ব্যথা অনুভব করেন, তবে শক্ত ব্যায়াম না করে হালকা হাঁটা বা যোগব্যায়াম করা উচিত।
- অতিরিক্ত পরিশ্রম না করা: পিরিয়ডের সময় শরীর দুর্বল থাকতে পারে, তাই অতিরিক্ত পরিশ্রম করা এড়ানো উচিত। স্বাভাবিক গতি বজায় রেখে ব্যায়াম করুন।
- যত্ন নিয়ে করুন: শরীরের পরিস্থিতি বুঝে ব্যায়াম করুন এবং নিজের সীমা জানুন।
এভাবে পিরিয়ডের সময়ও কিছু হালকা ব্যায়াম করা শরীর এবং মনের জন্য উপকারী হতে পারে। ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনি শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারেন।
পিরিয়ডের জন্য সেরা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ২০২৫
আরো পডুন : গর্ভবতী মেয়েদের খাবার সহজ ও স্বাস্থ্যকর
৪. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
পিরিয়ডের সময় শরীরের উপর অতিরিক্ত চাপ থাকতে পারে, কারণ এই সময়ে শরীরের নানা পরিবর্তন ঘটে এবং হরমোনের ভারসাম্যেও তার প্রভাব পড়ে। পিরিয়ড চলাকালীন সময় শরীরের প্রচুর শক্তি প্রয়োজন হয়, যা উপযুক্ত বিশ্রাম ছাড়া পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। তাই বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে।
এখানে কেন পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ এবং কীভাবে বিশ্রাম নিতে হবে, তার কিছু দিক আলোচনা করা হলো:
1. শরীরের পুনরুদ্ধার:
পিরিয়ডের সময় শরীর রক্তস্রাবের মাধ্যমে প্রচুর শক্তি হারায়। যদি পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নেওয়া হয়, তাহলে শরীরের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে এবং ক্লান্তি, দুর্বলতা, মাথাব্যথা বা অস্বস্তি বাড়তে পারে।
2. মাংসপেশির ক্লান্তি কমানো:
পিরিয়ড চলাকালীন মাংসপেশিতে সঙ্কোচন এবং অস্বস্তি অনুভূতি হতে পারে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম মাংসপেশির ক্লান্তি কমাতে এবং শরীরের সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সহায়ক। বিশ্রাম নেওয়া মাংসপেশির সঠিক কার্যক্রমের জন্য জরুরি, বিশেষত যখন পেটের ব্যথা বা পিঠের ব্যথা অনুভূত হয়।
3. মুড সুইং কমানো:
পিরিয়ডের সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মানসিক অবস্থা প্রভাবিত হতে পারে এবং মুড সুইং (মনের অস্থিরতা) দেখা দিতে পারে। বিশ্রাম নেওয়া মস্তিষ্ককে পুনরায় শান্ত এবং স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক এবং মানসিক চাপ কমায়।
4. গুড স্লিপ হ্যাবিটস:
এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি রাতে পর্যাপ্ত সময় ঘুমান। পিরিয়ড চলাকালীন সাধারণত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। ভালো ঘুম শরীরকে হালকা এবং সতেজ অনুভূত করতে সহায়ক এবং এটি আপনার শক্তির স্তর বাড়াতে সহায়ক।
5. স্ট্রেস কমানো:
বিশ্রাম বা ঘুম স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। শারীরিক এবং মানসিক ক্লান্তি দূর করতে পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটানা কাজ বা অতিরিক্ত স্ট্রেস আপনার পিরিয়ডের সমস্যা বাড়াতে পারে।
6. স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিশ্রাম:
বিশ্রামের জন্য আপনার আশেপাশের পরিবেশও গুরুত্বপূর্ণ। একটি শান্ত এবং অন্ধকার পরিবেশে ঘুমানো বা বিশ্রাম নেওয়া আপনার ঘুমের গুণগত মান বাড়ায় এবং শরীরকে সঠিকভাবে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়ক।
7. বিশ্রাম নেওয়ার সময় কিছু সহজ টিপস:
- হালকা বই পড়ুন বা মিউজিক শুনুন: বিশ্রাম নেওয়ার সময় হালকা বই পড়া বা পছন্দের গান শোনা মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
- গরম পানিতে স্নান: গরম পানিতে স্নান করলে পেশি শিথিল হয় এবং মানসিক শান্তি আসে।
- গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম: বিশ্রামের সময় শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে শারীরিক এবং মানসিক চাপ কমানো যায়।
8. অতিরিক্ত কাজ বা দুশ্চিন্তা এড়ানো:
পিরিয়ডের সময় শরীর এবং মনকে অতিরিক্ত চাপ দেওয়া উচিত নয়। কাজের চাপ কমানোর চেষ্টা করুন এবং নিজেদের জন্য কিছু সময় বরাদ্দ করুন।
পিরিয়ডের সময় সঠিক বিশ্রাম শরীরের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা আপনার স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
পিরিয়ডের জন্য সেরা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ২০২৫
৫. স্ট্রেস কমাতে সহায়ক উপায় অবলম্বন করুন
পিরিয়ডের সময় হরমোনাল পরিবর্তন, শারীরিক অস্বস্তি, মানসিক চাপ এবং বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিবর্তনগুলি অনেক মহিলার জন্য স্ট্রেস সৃষ্টি করতে পারে। তবে কিছু সহজ এবং কার্যকর উপায় অনুসরণ করে আপনি এই স্ট্রেস কমাতে সহায়ক হতে পারেন।
এখানে পিরিয়ডের সময় স্ট্রেস কমানোর কিছু সহায়ক উপায়:
1. ধ্যান বা মেডিটেশন:
ধ্যান বা মেডিটেশন স্ট্রেস কমানোর জন্য একটি খুব কার্যকর পদ্ধতি। এটি মনকে শান্ত রাখে এবং শরীরের চাপ কমাতে সাহায্য করে। মাত্র ১০-১৫ মিনিটের গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে বা ধ্যানের মাধ্যমে আপনি সহজেই মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। বিশেষ করে পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে ধ্যান আপনার মুড সুইং এবং মানসিক অবস্থা সামলাতে সাহায্য করবে।
2. গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম:
শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম একটি সহজ এবং কার্যকর উপায়, যা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। গভীর শ্বাস নেওয়া এবং ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়া স্ট্রেস কমাতে সহায়ক হতে পারে। আপনি একটি আরামদায়ক স্থানে বসে দীর্ঘশ্বাস নিন, এটি শরীরকে শিথিল করবে এবং মস্তিষ্কে শান্তি আনবে।
3. যোগব্যায়াম (Yoga):
যোগব্যায়াম শারীরিক ও মানসিক চাপ কমাতে এক অসাধারণ পদ্ধতি। পিরিয়ডের সময় আপনার শরীরকে নমনীয় রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে কিছু হালকা যোগব্যায়াম পোজ যেমন চাইল্ড পোজ, ক্যাট-কাউ পোজ, বা দণ্ডাসন করতে পারেন। যোগব্যায়াম শরীরের অস্বস্তি দূর করে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে মানসিক শান্তি প্রদান করে।
4. শারীরিক ব্যায়াম:
স্ট্রেস কমানোর জন্য শারীরিক ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাইক্লিং বা সাঁতার কাটাও উপকারী হতে পারে। এটি এন্ডোরফিন উৎপন্ন করে, যা “ফিল-গুড” হরমোন হিসেবে কাজ করে এবং মুড উন্নত করে। পিরিয়ডের সময় হালকা ব্যায়াম করা স্ট্রেস কমানোর পাশাপাশি শরীরকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
5. মিউজিক শুনুন:
পছন্দের গান শোনা বা মিউজিক শুনলে মন শান্ত হয় এবং স্ট্রেস কমে। আপনি শান্ত, সুষম সংগীত যেমন ক্লাসিকাল বা এনভায়রনমেন্টাল সাউন্ড ট্র্যাক শুনতে পারেন, যা মনকে প্রশান্তি দেয়।
6. বিশ্রাম ও ঘুম:
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুম স্ট্রেস কমাতে সহায়ক। যদি আপনার শরীর পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পায়, তবে স্ট্রেস আরও বাড়তে পারে। পিরিয়ডের সময় শরীর ক্লান্ত হতে পারে, তাই সঠিক সময়ে বিশ্রাম ও ঘুম নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
7. হালকা হাস্যরস বা কমেডি দেখুন:
হাস্যরস মানুষের মনকে শান্ত করতে এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। আপনি পছন্দের কমেডি শো বা মুভি দেখতে পারেন, যা হাসি এবং আনন্দের মাধ্যমে মনোযোগ সরিয়ে স্ট্রেস কমাবে।
8. পছন্দের কোনো হবি বা শখ অনুসরণ করুন:
কিছু সৃজনশীল বা আনন্দদায়ক কাজ, যেমন আঁকা, লেখালেখি, বই পড়া, বা বাগান করা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করতে পারে। পিরিয়ডের সময় যদি আপনি কিছু সময় নিজের শখ বা পছন্দের কাজ করেন, তাহলে এটি মানসিক শান্তি প্রদান করবে।
9. নিজেকে সময় দিন:
পিরিয়ডের সময় নিজের জন্য কিছু সময় বরাদ্দ করুন। দুশ্চিন্তা বা কাজের চাপ থেকে মুক্তি পেতে এবং নিজের জন্য সময় কাটানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে স্ট্রেস কমে এবং আপনি আরও সুস্থ অনুভব করবেন।
10. হালকা মেসেজ বা শরীরের যত্ন নেওয়া:
শরীরের উপর মৃদু ম্যাসেজ করা বা স্নান করা স্ট্রেস কমাতে সহায়ক। গরম পানিতে স্নান বা মাংসপেশিতে ম্যাসেজ করার মাধ্যমে শরীর শিথিল হয়ে যায় এবং মানসিক চাপ কমে।
11. সঠিক পুষ্টি এবং পানি পান:
পিরিয়ডের সময় সঠিক পুষ্টি এবং পর্যাপ্ত পানি পানও স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করতে পারে। সুষম খাদ্য গ্রহণ করা, যা প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল সমৃদ্ধ, শরীরকে আরও শক্তিশালী করে এবং মানসিক চাপ কমায়।
স্ট্রেস কমাতে এই উপায়গুলি অবলম্বন করলে আপনি পিরিয়ডের সময় মানসিকভাবে এবং শারীরিকভাবে আরও সুস্থ থাকতে পারবেন। শারীরিক এবং মানসিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই নিজের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত।
পিরিয়ডের জন্য সেরা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস
৬. হরমোন সুষম রাখতে সাহায্যকারী খাবার:
হরমোনের সুষমতা শরীরের সঠিক কার্যক্রম এবং সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন হরমোনের ভারসাম্য হারায়, তখন তা নানা শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন পিরিয়ডের অস্বাভাবিকতা, মুড সুইং, ত্বকের সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি বা হালকা ক্লান্তি। তবে, কিছু নির্দিষ্ট খাবার রয়েছে যা হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক এবং শরীরের প্রাকৃতিক হরমোনের উৎপাদনকে সহায়তা করতে পারে।
এখানে কিছু হরমোন সুষম রাখতে সাহায্যকারী খাবার:
1. ফ্যাটি অ্যাসিড (Omega-3 Fatty Acids):
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হরমোনের সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সহায়ক এবং এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি হরমোনাল ব্যালেন্স এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
- খাবারের উদাহরণ: স্যালমন মাছ, টুনা, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড, আখরোট এবং সূর্যমুখী তেল।
2. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার:
প্রোটিন হরমোন উৎপাদন এবং মেটাবলিজমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। হরমোনের সঠিক কার্যক্রমের জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিন থাকা প্রয়োজন।
- খাবারের উদাহরণ: মাংস, মাছ, ডাল, বাদাম, ডিম, টোফু এবং দুধ।
3. ভিটামিন D:
ভিটামিন D হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে টেসটোস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদনে সহায়ক। এছাড়া, ভিটামিন D শরীরের পেশি এবং হাড়ের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।
- খাবারের উদাহরণ: সানলাইট, স্যালমন মাছ, ডিম, পনির, এবং ভিটামিন D সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডাল, সয়া মিল্ক।
4. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার:
ফাইবার হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। এটি ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক হতে পারে।
খাবারের উদাহরণ: সবুজ শাকসবজি, ব্রকলি, ফুলকপি, শসা, মিষ্টি আলু, বাদাম, বীজ এবং ডাল।
৫. সস্তান্ত্রাল খাবার (Cruciferous vegetables):
এসব খাবার শরীরের ইস্ট্রোজেনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের টক্সিন দূর করতে সহায়ক।
- খাবারের উদাহরণ: ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শাক, এবং মুলা।
৬. অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাবার:
প্রদাহ কমানো হরমোন সুষম রাখতে সহায়ক, কারণ প্রদাহ হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে।
- খাবারের উদাহরণ: তাজা আদা, হলুদ, অলিভ অয়েল, এবং মধু।
৭. ভিটামিন B6:
ভিটামিন B6 হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, বিশেষ করে প্রোজেস্টেরন এবং এস্ট্রোজেনের স্তর নিয়ন্ত্রণে। এটি মানসিক চাপ কমাতেও সহায়ক।
- খাবারের উদাহরণ: কলা, মুরগির মাংস, আলু, শসা, বাদাম, এবং শুকনো ফল।
৮. প্রোবায়োটিকস:
প্রোবায়োটিকস অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং হরমোন সুষম রাখতে সহায়ক। এটি ইস্ট্রোজেনের প্রক্রিয়া এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- খাবারের উদাহরণ: দই, কেফির, কিমচি, সয়া (টেম্পে), এবং মিসো।
৯. সেলেনিয়াম:
সেলেনিয়াম হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক, বিশেষ করে থাইরয়েডের হরমোনের উৎপাদনে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
- খাবারের উদাহরণ: ব্রাজিল nut, মাশরুম, সয়া, এবং শসা।
১০. আয়রন সমৃদ্ধ খাবার:
আয়রন রক্ত সঞ্চালনে সহায়ক এবং শরীরে শক্তি বজায় রাখে, বিশেষত মাসিকের সময়।
- খাবারের উদাহরণ: লাল মাংস, পালং শাক, মটরশুঁটি, ডাল এবং সয়া।
এছাড়া, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত বা প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়ানো উচিত, কারণ এগুলি হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে হরমোনের সঠিক কার্যক্রম বজায় থাকে এবং আপনি সুস্থ ও শক্তিশালী থাকতে পারেন।
পিরিয়ডের জন্য সেরা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ২০২৫
৭. গরম সেঁক নেওয়া
পিরিয়ড চলাকালীন সময় শরীরের নানা ধরনের শারীরিক অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, যেমন পেট বা পিঠে ব্যথা, মাথা ব্যথা বা স্নায়বিক চাপ। এই সময়ে গরম সেঁক নেওয়া একটি সহজ, প্রাকৃতিক এবং কার্যকরী পদ্ধতি যা আপনাকে আরাম দিতে এবং ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে। গরম সেঁক শরীরের পেশি শিথিল করে, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
এখানে গরম সেঁক নেওয়ার কিছু উপকারিতা এবং কীভাবে সঠিকভাবে সেঁক নেওয়া যায় তা আলোচনা করা হলো:
গরম সেঁক নেওয়ার উপকারিতা:
হরমোন সুষম রাখা:
গরম সেঁক শরীরের হরমোনাল ব্যালান্সে সাহায্য করতে পারে, কারণ এটি শরীরকে শিথিল করে এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে, যা পিরিয়ডের সময়ে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
পেশি শিথিল করে:
গরম সেঁক পেশির সঙ্কোচন (যেমন পেট বা পিঠে) দূর করতে সহায়ক। এটি মাংসপেশি শিথিল করে এবং ব্যথা বা অস্বস্তি কমায়। বিশেষত পিরিয়ডের সময় পেটের নিচের অংশে ব্যথা বা মাংশপেশির টান কমাতে গরম সেঁক অত্যন্ত উপকারী।
রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়:
গরম সেঁক রক্তনালী প্রসারিত করে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। এটি শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলির আরও ভালো অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে, যা সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক।
স্ট্রেস কমানো:
গরম সেঁক শরীরের মধ্যে শান্তি এবং শিথিলতা নিয়ে আসে। এটি স্নায়ু সিস্টেমে আরাম দেয়, স্ট্রেস ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরের চাপ হালকা করে।
থাইরয়েড বা পেটের সমস্যা:
গরম সেঁক পেট বা পেটের নিচের অংশে প্রাকৃতিকভাবে আরাম দেয় এবং মাসিকের সময় যেসব পেটের ব্যথা বা অস্বস্তি হয়, তা অনেক কমিয়ে দেয়।
মাথা ব্যথা উপশম:
গরম সেঁক কখনও কখনও মাথাব্যথা বা টেনশন হেডেক কমাতে সাহায্য করতে পারে, বিশেষত যদি তা ঘাড় বা কাঁধে চাপের কারণে হয়।
গরম সেঁক নেওয়ার উপায়:
- গরম পানির বটল বা হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার: গরম পানির ব্যাগ বা বটল অনেক সহজ উপায়। আপনি এটি পিরিয়ডের সময় পেটের নিচের অংশে বা পিঠে লাগাতে পারেন। গরম পানির ব্যাগটিকে একটি মাখন বা পাতলা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে ব্যবহার করুন যাতে সরাসরি তাপ লাগবে না।
- গরম স্নান: একটি গরম স্নান শরীরকে পুরোপুরি শিথিল করতে সাহায্য করে এবং মাংসপেশি শিথিল হওয়ার পাশাপাশি মানসিক শান্তিও বজায় রাখে। আপনি যদি গরম পানিতে কিছু ইথেরিক অয়েল (যেমন ল্যাভেন্ডার বা পিপারমিন্ট) যোগ করেন, তাহলে তা আপনার শিথিলতা আরো বাড়াবে।
- হট কমপ্রেস: গরম সেঁক নিতে হট কমপ্রেস ব্যবহার করতে পারেন। একটি পরিষ্কার তোয়ালে গরম পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিন এবং এটি পেটে বা পিঠে ধীরে ধীরে লাগান। কিছু সময় পর এটিকে আবার ভিজিয়ে নিতে পারেন।
- গরম পানি বোতল ব্যবহার: একটি গরম পানি বোতল (যা বিশেষভাবে সেঁক নেওয়ার জন্য তৈরি) খুবই কার্যকরী। এটিকে পেট বা পিঠের সাথে লাগিয়ে রাখতে পারেন, এবং তাপমাত্রা খুব বেশি হয়ে গেলে, কাপড় দিয়ে বেকুব লাগিয়ে নিন।
সতর্কতা:
- গরম সেঁক নেয়ার সময় তাপমাত্রা খুব বেশি না হওয়া নিশ্চিত করুন, কারণ অতিরিক্ত গরম তাপ শরীরের ত্বকে ক্ষতি করতে পারে।
- যদি আপনার কোনো ত্বকের সমস্যা বা সংক্রমণ থাকে, তবে গরম সেঁক নেওয়া এড়িয়ে চলুন অথবা ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- গরম সেঁক নেওয়ার পর শরীরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম দেওয়া উচিত।
গরম সেঁক পিরিয়ডের সময় শারীরিক অস্বস্তি কমাতে, শিথিলতা এবং শান্তি আনার একটি প্রাকৃতিক এবং কার্যকরী পদ্ধতি। এটি আপনার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।






6 thoughts on “পিরিয়ডের জন্য সেরা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ২০২৫”