---Advertisement---

হস্ত মৈথুনের উপকারিতা ও অপকারিতা

Published On: May 1, 2025
হস্ত মৈথুনের উপকারিতা ও অপকারিতা
---Advertisement---

হস্ত মৈথুন (Masturbation) একটি স্বাভাবিক যৌন আচরণ, যা নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই কমবেশি দেখা যায়। তবে আমাদের সমাজে এই বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা খুবই সীমিত, ফলে অনেকেই বিভ্রান্তি ও ভুল ধারণায় ভোগেন। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানব – হস্ত মৈথুনের উপকারিতা ও অপকারিতা, সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে।

হস্ত মৈথুন কী?

হস্ত মৈথুন (ইংরেজিতে: Masturbation) হলো নিজের যৌনাঙ্গে হাত বা অন্য কোনো উপায়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে যৌন তৃপ্তি লাভ করা, যা সাধারণত বীর্যপাত বা অর্গাজমে শেষ হয়। এটি একান্ত ব্যক্তিগত ও স্বাভাবিক যৌন আচরণ, যা নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই দেখা যায়।

এটি সাধারণত তখনই ঘটে, যখন একজন ব্যক্তি নিজের যৌন আকাঙ্ক্ষা মেটানোর জন্য অন্য কাউকে অংশীদার না করে নিজেই নিজের শরীরকে উত্তেজিত করে। অনেক মানুষ যৌন চাহিদা কমানোর উপায় হিসেবে হস্ত মৈথুন করে থাকেন।

➤ বৈজ্ঞানিকভাবে এটি একটি স্বাভাবিক বিষয়, এবং অনেক ক্ষেত্রেই এটি যৌন স্বাস্থ্য রক্ষা ও মানসিক চাপ হ্রাসে সহায়ক।

হস্ত মৈথুনের উপকারিতা ও অপকারিতা

হস্ত মৈথুনের উপকারিতা

হস্ত মৈথুনের উপকারিতা

যদি এটি সীমিত পরিমাণে ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে করা হয়, তবে হস্ত মৈথুন দেহ ও মনের জন্য বেশ কিছু উপকার বয়ে আনতে পারে।

১. মানসিক চাপ কমায়

হস্ত মৈথুন করলে শরীরে “ডোপামিন” ও “অক্সিটোসিন” হরমোন নিঃসরণ হয়, যা মনকে শান্ত করে এবং স্ট্রেস ও টেনশন কমাতে সাহায্য করে।

২. ভালো ঘুম আসতে সাহায্য করে

হস্ত মৈথুনের পরে শরীর ও মন শিথিল হয়, যার ফলে সহজে ঘুম আসে। যাদের ইনসমনিয়া বা ঘুমের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটি উপকারী হতে পারে।

৩. যৌন স্বাস্থ্য সচল রাখে

নিয়মিত হস্ত মৈথুন পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট গ্রন্থি সচল রাখতে সাহায্য করে, আর নারীদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সময়ের পেটব্যথা কমাতে সহায়তা করতে পারে।

৪. প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মাসে ২০ বার বা তার বেশি বীর্যপাত করলে পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

৫. শরীর সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায়

হস্ত মৈথুনের মাধ্যমে মানুষ নিজের শরীর ও যৌন চাহিদা সম্পর্কে বেশি সচেতন হয়, যা পরবর্তীতে স্বাস্থ্যকর যৌন সম্পর্ক গঠনে সহায়ক।

৬. হরমোন ব্যালেন্সে সাহায্য করে

এটি টেস্টোস্টেরনের মতো হরমোনের স্বাভাবিক নিঃসরণে সাহায্য করে, যা যৌন শক্তি ধরে রাখতে সহায়ক।

৭. সঙ্গমে সহনশীলতা বাড়ায়

যারা প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশনে (অত্যন্ত তাড়াতাড়ি বীর্যপাত) ভোগেন, তাদের জন্য হস্ত মৈথুন একটি ট্রেনিংয়ের মতো কাজ করে।

মনে রাখবেন:

হস্ত মৈথুন তখনই উপকারী, যখন এটি নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং দৈনন্দিন জীবন, সম্পর্ক ও স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত না করে। অতিরিক্ত বা আসক্তিজনিত হস্ত মৈথুন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

ইসলামে হস্ত মৈথুনের উপকারিতা – কী বলে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি?

ইসলামের দৃষ্টিতে হস্ত মৈথুন (আরবি: إستمناء) বা আত্মসন্তুষ্টি একটি বিতর্কিত ও স্পর্শকাতর বিষয়। যদিও আধুনিক বিজ্ঞানে হস্ত মৈথুনের কিছু উপকারিতা বলা হয়ে থাকে, তবে ইসলামে এই কাজকে সাধারণত নিরুৎসাহিত বা নিষিদ্ধ বলা হয়েছে। নিচে ইসলামের আলোকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হলো

ইসলামে হস্ত মৈথুন – মূল অবস্থান

🔹 কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি:

আল্লাহ তাআলা বলেন:

“আর যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে,
তাদের স্ত্রী ও দাসী ব্যতীত, এদের সঙ্গে সহবাসে তারা নিন্দিত হবে না।
এরপর কেউ যদি এর বাইরে কিছু চায়, তবে তারা সীমালঙ্ঘনকারী।”

📚 (সূরা মু’মিনূন, আয়াত: ৫-৭)

এই আয়াত থেকে অনেক ইসলামী স্কলার বলেছেন:
হস্ত মৈথুন স্ত্রী বা স্বামী ব্যতীত যৌন চাহিদা পূরণের একটি মাধ্যম, তাই এটি সীমালঙ্ঘন।

⚖️ হস্ত মৈথুনের ক্ষেত্রে ইসলামিক মতভেদ:

ইসলামী স্কলারদের মধ্যে তিনটি ভিন্ন মতামত রয়েছে:

১. সম্পূর্ণ হারাম (নিষিদ্ধ) –

অনেক আলেম যেমন ইমাম মালেক ও ইমাম শাফি (রহ.) বলেন:
➡️ এটি সম্পূর্ণ হারাম, কারণ এটি কুরআন ও সুন্নাহর আদর্শ থেকে বিচ্যুত।

২. মাকরুহ বা অপছন্দনীয় –

কিছু আলেম বলেন, এটি সম্পূর্ণ হারাম না হলেও অত্যন্ত অপছন্দনীয় ও আত্মনিয়ন্ত্রণহীনতার পরিচয়।

৩. নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে অনুমতি –

ইমাম আহমদ বিন হাম্বলসহ কিছু আলেম বলেন:
➡️ যদি ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে এবং বিবাহের সুযোগ না থাকে, তখন ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য হস্ত মৈথুন কম ক্ষতিকর বিকল্প হতে পারে।

হজম শক্তি বাড়ানোর ৫টি কার্যকর ঘরোয়া উপায়

❌ হস্ত মৈথুনের অপকারিতা

১. অতিরিক্ত হস্ত মৈথুন শারীরিক দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে

দৈনিক বা অতি ঘন ঘন হস্ত মৈথুন করলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এতে শক্তি হ্রাস, মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখা, পেশিতে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।

২. যৌন দুর্বলতা ও ইরেকটাইল ডিসফাংশন

অতিরিক্ত হস্ত মৈথুন করলে অনেক সময় পুরুষদের মধ্যে ইরেকশন ঠিকমতো না হওয়া, অথবা যৌনমিলনের সময় বীর্য দ্রুত বের হয়ে যাওয়া (premature ejaculation) সমস্যা দেখা দেয়।

৩. মানসিক সমস্যার সৃষ্টি

অনেকেই হস্ত মৈথুনের পর অপরাধবোধ, লজ্জা বা হতাশা অনুভব করেন। দীর্ঘমেয়াদে এটি অবসাদ, আত্মবিশ্বাসের অভাব ও আত্মসম্মানহানির কারণ হতে পারে।

৪. পর্নগ্রাফির প্রতি আসক্তি

হস্ত মৈথুনের সময় অনেকেই পর্ন ভিডিও বা ছবি দেখে থাকেন। এতে ধীরে ধীরে পর্ন আসক্তি তৈরি হতে পারে, যা বাস্তব জীবনের যৌন সম্পর্ককে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।

৫. সঙ্গীর প্রতি আগ্রহ হ্রাস

হস্ত মৈথুনে অতিমাত্রায় অভ্যস্ত হলে অনেকের মধ্যে বাস্তব যৌন সম্পর্কের প্রতি আগ্রহ কমে যায়, যার ফলে দাম্পত্য জীবনে দূরত্ব তৈরি হয়।

৬. সময় ও কর্মক্ষমতা নষ্ট

যদি এটি আসক্তির পর্যায়ে পৌঁছায়, তাহলে শিক্ষার্থী বা কর্মজীবীদের সময় নষ্ট, ফোকাসের অভাব ও কর্মদক্ষতা হ্রাস পেতে পারে।

৭. ত্বকের ক্ষতি

পুরুষদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘর্ষণের কারণে যৌনাঙ্গে লালচে ভাব, ফাটা বা সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পেতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত স্টিমুলেশনে অস্বস্তি হতে পারে।

সতর্কবার্তা:

হস্ত মৈথুন একদম বন্ধ করার দরকার নেই, তবে এটি যদি দৈনন্দিন জীবন, সম্পর্ক বা মানসিক অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করে, তাহলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি।

ইসলামে হস্ত মৈথুনের অপকারিতা – ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলামে হস্ত মৈথুন (মাস্টারবেশন) একটি বিতর্কিত বিষয়, এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী আইন বা শরিয়তে সাধারণত খুবই পরিষ্কার দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ইসলাম যৌনতার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দেয়, এবং এজন্য ইসলামী স্কলাররা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইসলামে হস্ত মৈথুন

কুরআন ও হাদীসে হস্ত মৈথুনের বিষয়ে সরাসরি কোন নির্দেশনা নেই, তবে ইসলামী স্কলাররা সাধারণত এটিকে নিষিদ্ধ বা মাকরুহ (অপছন্দনীয়) বলে বিবেচনা করেছেন।

কুরআনের আয়াত:
আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন:

“আর যারা নিজেদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে, সেগুলোর বাইরে কেউ তাদের ওপর হক রাখে না। তবে তাদের স্ত্রী বা দাসী ছাড়া। যারা এভাবে অন্যদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে, তারা সীমালঙ্ঘনকারী।”
📚 (সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৫-৭)

এটি প্রকাশ করে যে, ইসলামে যৌন সম্পর্কের জন্য বিবাহকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং অন্য কোনও উপায়, বিশেষত আত্মসন্তুষ্টি, নিষিদ্ধ বা অপছন্দনীয়।

⚖️ ইসলামিক স্কলারদের মতামত

১. হারাম (নিষিদ্ধ):

অনেক ইসলামী স্কলার যেমন ইমাম মালেকইমাম শাফি (রহ.) মনে করেন যে, হস্ত মৈথুন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ (হারাম)। তারা বলেন, হস্ত মৈথুন “প্রাকৃতিক উপায়ে যৌন চাহিদা পূরণের” পরিবর্তে অন্যথা পূর্ণ করা এবং এটি ইসলামিক নীতির বিরুদ্ধে।

২. মাকরুহ (অপছন্দনীয়):

কিছু স্কলার, যেমন ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, হস্ত মৈথুনকে মাকরুহ (অপছন্দনীয়) বলেছেন, যদি এটি যৌন চাহিদা নিয়ন্ত্রণের বিকল্প হিসাবে করা না হয়। তারা মনে করেন যে, যদিও এটি হারাম নয়, তবে এটি ইসলামে খারাপ কাজ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং আল্লাহর নিকট এটি গ্রহণযোগ্য নয়।

৩. সীমিত শর্তে অনুমতি:

কিছু স্কলার মনে করেন, যদি কোনো ব্যক্তি মৌলিক যৌন চাহিদা মেটাতে সক্ষম না হয় এবং ফিতনা (অবৈধ যৌন সম্পর্ক) এড়িয়ে চলতে চায়, তবে তাদের জন্য মসজিদে রোজা রাখা বা হস্ত মৈথুন করা কিছুটা অনুমোদিত হতে পারে। তবে এই মতামত অল্প সংখ্যক স্কলারই সমর্থন করেন।

❌ হস্ত মৈথুনের অপকারিতা ইসলামে

১. আত্মসন্তুষ্টির মাধ্যমে স্বাভাবিক বিবাহিত জীবনের প্রতি আগ্রহ কমে যায়:

ইসলামে যৌন সম্পর্ক শুধুমাত্র বিবাহিত জীবন এবং পরস্পরের সঙ্গীর প্রতি আনুগত্য ও শ্রদ্ধায় সীমাবদ্ধ। অতিরিক্ত হস্ত মৈথুনের ফলে একজন ব্যক্তি বিবাহিত জীবনে আগ্রহ হারাতে পারে, যা ইসলামী নীতির বিরুদ্ধে।

২. ঐতিহ্যবিরোধী:

হস্ত মৈথুন এক ধরনের ঐতিহ্যবিরোধী আচরণ হিসেবে দেখা যায়, যেহেতু এটি শরিয়তের নির্ধারিত পথ বা বিবাহের পরিসরে আসে না।

৩. অপরাধবোধ ও মানসিক দুশ্চিন্তা:

হস্ত মৈথুনের পর অনেক মুসলিম অপরাধবোধ ও লজ্জা অনুভব করেন, বিশেষ করে যারা এই কাজটি গোপনে করেন। এটি মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা তৈরি করতে পারে, যা ইসলামে নিষিদ্ধ।

৪. মধ্যস্থতা ও আত্মসংযমের অভাব:

ইসলামে যৌন চাহিদা পূরণের জন্য আত্মসংযম ও মধ্যপন্থা অনুসরণ করা উচিত। হস্ত মৈথুন এটি পুরোপুরি লঙ্ঘন করে, যা আত্মসংযমের অভাব এবং অনুশাসনের প্রতি অশ্রদ্ধা বলে গণ্য করা হয়।

উপসংহার:

ইসলামের দৃষ্টিতে হস্ত মৈথুন সাধারণত নিষিদ্ধ (হারাম) বা অপছন্দনীয় (মাকরুহ) হিসেবে বিবেচিত। এটি ইসলামের আধ্যাত্মিক ও শারীরিক আদর্শের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, কারণ ইসলাম যৌনতার ক্ষেত্রে বিবাহ এবং আত্মসংযম বজায় রাখতে উৎসাহিত করে।

তবে, কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে ফিতনা বা অবৈধ যৌন সম্পর্ক থেকে বাঁচতে হস্ত মৈথুন করা কিছু স্কলারদের মতে কম ক্ষতিকর হতে পারে, তবে এটি কখনোই ইসলামের আদর্শ পন্থা নয়। সুতরাং, হস্ত মৈথুন যদি আত্মসংযমের অভাব হয়ে দাঁড়ায়, তবে এটি শরীয়ত অনুযায়ী নিরাপদ নয়

ইসলামে রোজা রাখা, বিবাহ করা, এবং আত্মসংযম প্রতিষ্ঠা করা শ্রেষ্ঠ উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়। এই উপায়গুলোর মাধ্যমে একজন মুসলিম তার যৌন চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি অর্জন করতে পারেন।

সর্বোপরি, ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, হস্ত মৈথুন থেকে বিরত থাকা এবং সামাজিক ও আধ্যাত্মিক শুদ্ধতার দিকে মনোযোগ দেওয়া সবচেয়ে উত্তম।

---Advertisement---

1 thought on “হস্ত মৈথুনের উপকারিতা ও অপকারিতা”

Leave a Comment